অমানিশার ঘোর অন্ধকারও কারও কারও ভালো লাগে, কখনও কখনও! আমি হয়থ সেরকম কোনও জীব! আমাকে যারা সাধু ভাবে আমার ধারণা তাদের মতো শ্রেয়মাণ বোকা আর কেউ নেই। কিন্তু সেই বোকারা ভাবে এ আমার নিতান্তই বিনয়, আমার বড়ত্ব, আমার মহত্ব আরও প্রকট হয় ওদের কাছে। আমি কিন্তু তৃপ্তি পাই এতে।.....
আমি অন্ধকারকে ভালোবাসী। তাই বলে আলোকে ভালোবাসি না তা কিন্তু নয়। অমানিশা চাই কখনও কখনও.....
আমার জীবনের একটি অধ্যায় আছে ঘোর অমানিশায় ঢাকা। আমার যৌবনের সেরা সময়টি ছিল অমানিশার ঘোরে পরিবৃত। ধার্মিকশ্রেণীর লোকেরা বারবার সতর্ক করেছে কিন্তু বাধা দেয়নি। আমি সতর্কতায় আরও বহুগুণ উদ্দাম হয়েছি তাতে।......
বয়সের দোষ দিয়ে নিজের সাফাই গাইতে পারি, কিন্তু সেটা নিতান্তই এস্কেপিস্টদের অনুসরণ হয় তাই নিজের যতটুকু দায় ছিল সেটুকু স্বীকৃত হই। এ আমার উদারতা নয় এ আমার ঔদ্ধত্য।.....
বিবেচনার জন্য কিছু ঘটনা বলে নেওয়া ভালো।
ক্লাস এইটে থাকতে একটা স্টান্ডার্ড বয়স্ক শরীরের স্বাদ আমাকে পেতে হয়েছিল তার ভালোবাসা নামক কামের অনলে, সেটা ছিল হাতে খড়ি। আনন্দ ছিল না ছিল ভয় আর পালাবার ইচ্ছা। এরপর ক্লাস টেনে যখন পড়ি তখন আমার ঘাড়ে সওয়ার হয় মনিরখানের তোমার কোনও দোষ নেই অ্যালবাম আর মৌসুমী নামের একটা মেয়ে। ক্লাস নাইনে যেই মেয়ে আমাকে তার মনের কথা বলবার কৌশলটি প্রয়োগ করে প্রত্যাখ্যাত হেয়ছে এবার সে হয়েছে আমার শয়নে স্বপনে এক অন্তিম আত্মা.....মনিরখানের গানগুলো মনের ভেতরের সবকথাই এমনভাবে বলে দিচ্ছিল যে আমার আর নিজের কিছু বলতে হয় না। গানগুলো লিখে(হাতের লেখা সুন্দর ছিল)একটা ডাক্তারি পেডে তাকে পৌছেঁ দেই। যদিও ততদিনে তিনি এনগেজ হয়ে গেছেন অন্যকোনও ডালে। আমি ধারণা করি তার পাশের বাসার ছেলেটিই বোধয়। ছেলেটি দেখতে অনেক সুন্দর। ওরা ধনীও বেশ। আমার বাবার চেও উঁচু পোস্টে চাকরি করে...এসব বিষয়ীজ্ঞান খুব বেশি ছিল বলে মনে করি না তবে হীনম্মন্যতা যে ছিল সেটা (এখনও আছে) স্বীকার করাই উচিৎ। আমার লেখা গানগুলো হাতে নিয়ে সে বলে এগুলো কী লিখেছেন?
কেন তুমি পড়তে জানো না?
আমি ছোটবেলা থেকেই একটু ত্যাড়া প্রকৃতির! বড়রা বেয়াদব বলে অনেক ভৎসর্না করে।
কেন লিখেছেন?
তাতো জানি না। একটু হেরে যাওয়া ভাব নিয়ে বললাম। মনের ভিতর অনুশোচনা কেন দিতে গেলাম!
এটা আমি নিতে পারবো না, আপনি নিয়ে যান
ওকে! আসি
শোনেন!
বলো! যাবার সময় যদি রনির সাথে দেখা হয় একটু আসতে বলবেন
রনিটা কে আমি জানি। ও কি সেটা বোঝাবার জন্যই....
আমি রাস্তায় রনিকে পেলাম সঙ্গে আরও কিছু এলাকার পোলাপান। আমাকে দেখে যেন সরে গিয়ে পজিশন নিল। আমি সামনে না এগিয়ে রনিকে ডাকলাম। বললাম মৌসুমি তোমাকে ডাকছে।...
পরিবেশটা যেন কেমন হয়ে গেলো। আমার মনে হচ্ছিল ওরা আমাকে আটকাবার প্রস্তুতি নিয়েছিল....
কেন?....মৌসুমিই কি ওদের ...নাকি রনি ঈর্ষান্বিত হয়ে.....
প্রশ্নটার সমাধান হয়নি।
আমি হেরে যেতে শিখিনি। আবার জোর খাটাতেও শিখিনি। নিজের ব্যক্তিত্বকে সবচে বেশি সতর্ক পাহাড়াই দিয়ে এসছি। দ্বিতীয়বার নিজেকে ওরকাছে সমর্পণ করার প্রবৃত্তি হলো না। এতোটা কম্প্রোমাইজিং হতে পারিনি।
প্রায় মাস ছয়েকপর ওরা এলো আমাদের বাসায় বেড়াতে। সেসময় ওকে দেখে সবাই কেমন মুগ্ধ হয়ে গেলো। আন্টি নিজেও মেয়ের প্রশংসায় পঞ্চমুখ।....মায়ের সাথে কথার সময় নিজের মেয়েকে কেমন ছেলে কাছে পাত্রস্থ করতে চান সে ব্যাপারেই বেশি উৎসাহ দেখালেন।
আমি যতোটা পেরেছি এড়িয়ে গেছি। একবার আঙ্কেল সরাসরি জিজ্ঞেস করেন তোমার কী হয়েছে? মসুমের সাথে ঝগড়া হলো নাকি? কথাই বলো না!
আমি প্রাণপণ অস্বীকার করি।
আঙ্কেল রনিরা কি আছে নাকি চলে গেছে?
ও তুমি জানো না? ওরাতো কবেই চলে গেছে।
(ওরা চলেগেছে সেটা আমার জানার কথাও না, তবে ঘটনা আছে)
একটা ঘটনা ঘটেছে, রনির বোনটা আত্মহত্যা করেছে। তারপর আর ওরা এখানে থাকতে পারল না। প্রতিরাতেই মেয়েটা ফিরে আসে ওর মা কান্নাকাটি করে...তারপর এবাসা ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়াই শ্রেয় মনে করলো।
তার মানে রনির সাথে মৌসুমির সম্পর্ক কাটঅফ। এবং যেহেতু রনির বোন ছিল ওর বান্ধবী, তাই বান্ধবীর আকাল মৃত্যুই ওর মাঝে এমন পরিবর্তন এনে দিয়েছে। ওরাই নাকি শীঘ্রই বাসা ছেড়ে দেবে।
রনির বোন কেন আত্মহত্যা করলো?
এই রহস্যটা আমি জানতে চাইনি কখনও। তবে....
আমি যার হোণ্ডা নিয়ে ওদের বাসায় গিয়েছিলাম সেই বন্ধুটার সাথে এই রহস্যের একটা সম্পর্ক আছে। ও ছিল ত্রিশপাড়া কোরানের হাফেজ। এবং এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তির ভাতিজা। ওরা সাবই বেশ নামি দামি। এলাকার এমপি যেই হোক ওদের আত্মীয়।....
ব্যাপারটায় ডিটেইলে আমি গেলাম না। কিন্তু একটা সন্দেহ দানা বাধলো। নজরুল কি....
ব্যাপারটায় আমার কষ্ট পাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু আমার কেন যে খুব আনন্দ হলো বুঝতে পারলাম না। হয়ত আমার শোধটাই এভাবে নেওয়া হলো।...
মৌসুমির সঙ্গে বছর দুয়েকের প্রেম হলো। ওরা তখন ঢাকায়। নারায়ন গঞ্জে।
শীতলক্ষ্যার পাড়ে হাতধরে ঘুরে বেড়িয়েছি দুজন। ওর বান্ধবীরাও ছিল।....
প্রেমটা কন্টিনিউ হয়নি। কেন হয়নি সেটা বলতে পারছি না।....
এরপর আমার জীবনে আসে এ্যানি। দুর্দান্ত প্রেমের জোয়ার নিয়ে ওর আগমন। আমাকে দেয়নি এমন কোনও সুখ ও বাকী রাখেনি। আমি যেভাবে পেরেছি ভেসে বেড়িয়েছি। এখানেও ছিল ভিলেন সোহেল। আমার পা কেটে ফেলে দেবে হুমকি দিয়েছিল ও। সেরাতেই আমি ওর বাসায় যাই এবং....
ওর মাকে বলে আসি কাল থেকে ছেলেকে যদি জীবিত দেখতে চান তাহলে আর কলেজে পাঠাবেন না।
তুমি অমুক না বাবা?
হ্যা, মা
আমার ছেলে কী করেছে তোমার?
সেটা ওকে জিজ্ঞেস করলে জানতে পারবেন। আমি এসছিলাম এই বাড়িটা উগিয়ে দিতে, কিন্তু আমারে মায়ের মতো এক মাকে কিছু করা আমার সম্ভব না। অতএব কাল আমি ওকে যেখানে পাবো....
সেরাতেই সোহেল কিছু ছেলেপেলে পাঠায় আমার বাসায় দুটি উদ্দেশ্য আমাকে ভয় দেখানো আর মীমাংসা। ছেলেগুলো ওর আত্মীয় আমার এলাকার। মন্ত্রীর আত্মীয় স্বজন। আমি বললাম আমি এখানে একা এসছি। এখানে আমার কেউ থাকে না। চলে যাবার সময় একটা কিছু করে যাব দিসইজ ফাইনাল।
ও আপনাকে কী বলেছে?
আমার পা কেটে রেখে দেবে
ও নিজে বলেছে?
না ওর সাঙ্গপাঙ্গ দিয়ে বলিয়েছে...
এমনওতো হতে পারে ওরা নিজেরাই বন্ধুর জন্য....
ওকে! তাহলে কাল কলেজে সোহেল কলেজের সবার সামনে মাফ চাইবে...ইজ ইট পসিবল?
বস তা কি করে হয়। ওকেতো রাজনীতি করতে হয়।
পরদিন কলেজে জাকির ওকে দুইতলা থেকে ফেলে দেয়। ও ভাবে আমিই কাজটা করিয়েছি। ওর একটা পা ভেঙে যায়। আমি নিজে ওকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। ও বলে বস আমি ক্ষমা চাইতে এসছি আমারে মাইরেন না। আমি আর জীবনেও...
চুপ! তোরে মারবো মানে? তোরে কে ছাদ থেকে ফেলল তাই বল, দেখ ওরে কী করি....
জাকির!
ঠিক সেসময় জাকির এসে হাজির হয়। ভাইয়া ওকে আমাদের হাতে দেন।
জাকির, জনিয়র, জুনিয়রের মতো থাকবা। তুমি আমারে কমান্ড করো!
স্যরি ভাই! অরে দেন...
দেব, আগে হাসপাতালে নেই, সুস্থ হোক, তারপর।
না ভাই আপনি এটা করতে পারেন না। পুরো কলেজে তখন থমথম অবস্থা।
আমি এটা পারি।
ওর সাথের এক ছেরে বলে আপনের এত মাথাব্যথা কেন? আপনে...
জাকির ওকে থামিয়ে দেয়. কানে কানে কী যেন বলে...
আমি জাকিরকে বললাম আমি ওকে হাসপাতালে পৌছেঁ দেবো, তোমার যদি সাধ্য থাকে ঠেকাও।
ইতিহাসের নাসির স্যার আমাকে দেখে এগিয়ে আসেন। মামাতবোনের হাজব্যান্ড। কী ব্যাপার! আমি বলি স্যার প্লিজ দশমিনিট পর আসেন। জিনুকে বলি স্যারকে রুমে রেখে আয়। স্যার প্রয়োজন হলে ডাকবো। প্লিজ!.....
সেই যাত্রায় সোহেল বেঁচে গেলো। আর কখনও এ্যানির পথে বাধা হয়নি।.....
দীর্ঘ চারবছর আমাদের প্রেম চলে।
এরপর ওর জীবনে আসে একটা ভাঙা সামুক। ওর ফুপাতো ভাই। গ্রাম থেকে আসে পরীক্ষা দিতে। একমাস থাকে এর মধ্যে যা হবার হয়ে যায়। আমি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিরে জানতে পারি এ্যানি হাসপাতালে, সাতদিন হলো। সেন্স আসছে না।সুইসাইড করেছে।....
মেয়েরা কেন এতো সহজে সুইসাইড করে?.....ও মরে গেছে এটা আমি বিশ্বাস করতে পারি না। আমার মনে হয় জীবিতই ওকে কবরে শুইয়ে রাখা হয়। যেহেতু জ্ঞান ফেরেনি।....
শিক্ষাজীবনের শেষদিনে একটি মেয়েকে অফার করি। সে সাথে সাথে লুফে নেয়, এখন তার সাথেই সংসার। ভালো নেই। অথবা ভালো আছি কিন্তু বুঝতে পারছি না। আমাকে বাচিয়েঁছে। ওদের স্মৃতি হাতরাতে ভালোলাগে। মাঝে মাঝে অন্ধকারে ডুব দেই। এ্যনি এবং মৌসুমির সাথে যেসব সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল তার স্বাদ আজও পাই। অথচ বধু হিসেবে আসা এই মেয়েটিকে পাচ্ছি প্রতিদিন অথচ সেই স্বাদ নেই, আছে বিরক্তি আর বিস্বাদ!
আমি অন্ধকারের জীব বলেই কি এমন? নাকি প্রতিটি মানুষই এমন?
এখন আবার একটি অন্ধকার হাতড়ে বেড়াই। মেয়েটি আমাকে পাত্তা দেয় না। জানি একদিন ঠিকই দেবে....আমি জানি কী করে পাত্তা পেতে হয়। ওর সাথে ফোনে কথা বলি কী যেন লেগে থাকে সে কথায়....
কী করছিলেন?
তোমার কথা ভাবছিলাম
মিথ্যেকথা
ঠিক
কি ঠিক?
মিথ্যে বললে যে সেটা
তার মানে আমার কথা ভাবেননি?
সময় পেলাম কই
আচ্ছা রাখি
ওকে!
আমি যখন ফোন দেই
বউ তুমি কী করছিলে?
চুপ ফাজিল! কে তোর বউ? ইশ ঘরে একটারে নিয়ে থাকিস তখন মনে থাকে না।
তুমি চলে আসো। রুম ফাঁকা আছে।
নিকুচি করি....
একদিন ঠিকই আসবে
জীবনেও না।
একটা কিস খাবা?
হারামি
আরে কী ভেবে গালি দেও? আমাকে বলিনি
রাখি রাখি তোমার সাথে কথা বলতে ভালোলাগে না।
আচ্ছা.........
শোনো আমি তোমাকেযে ম্যাসেজ পাঠাই তুমি আনসার করো না কেন?
ভালো লাগে না।
ঠিক আছে এখন থেকে এমন মেসেজ পাঠাবো....
এবং সত্যি আলতু ফালতু মেসেজ পাঠাই। ও বাধ্য হয়ে রেসপন্স করে।
কিন্তু মাঝে মাঝে যখন ওর খুব ইচ্ছে হয় আমার সাথে রসিয়ে রসিয়ে কথা বলবে তখনই ওকে আমার বাজে মেয়ে মনে হয়, মনে হয় ধরা খাওয়া....আর এসব ভাবনার কারণে কথা বলতে ইচ্ছে করে না। ভালোলাগে ততক্ষণ যতক্ষণ সূর্যের তীর্যকতা থাকে ওর কণ্ঠে। মাঝে মাঝে রাতের আলাপে সে সেলাসাস ডায়লগ দেয়....আমি তাকে স্থীর করি....অথচ আমিও তাকে মাঝে মাঝে উত্তেজিত করি....
কেন এমন বিপরীত আচরণে মন সায় দেয় বরারর?
আমি জানি না, মনে হয় অমানিশার আধার আমাকে কুড়ে কুড়ে খায়।....ধার্মিকেরা যাকে বলে পাপ!